kalchitro
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

পড়তে হবে, কারণে বা অকারণে


কালচিত্র | মিজানুর রহমান মিজু প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম পড়তে হবে, কারণে বা অকারণে

পড়তে হবে, কারণে বা অকারণে

মিজানুর রহমান মিজু

 

এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা চলনে-বলনে হয়তো অনেক চৌকস, চিন্তাধারায় হয়তো অনেক অগ্রসর ; কিন্তু তাদের একটা বড় দোষ--- তারা বই পড়ে না। ‍‍`বই‍‍` বলতে আমি বোঝাচ্ছি ছাপার অক্ষরে লেখা মলাটযুক্ত বই। আমি বোঝাচ্ছি --- পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে আরো বই আছে --- সেসব বই। ছোট বাচ্চারাও বই পড়ে না, বড় বাচ্চারাও না। এমনকি টেক্সটবইয়ের সিলেবাসভুক্ত অংশটুকু ছাড়া বাকি অংশটাও তারা পড়ে না। নিত্যনতুন জিনিস পড়ার মধ্যে যে আনন্দ, যে বৈচিত্র্য আর ভালোলাগা কাজ করতে পারে --- একথা আজকের প্রজন্ম যেনো জানেই না। ওরা স্মার্ট ফোনেই বুঁদ। বলা হয়--- ওরা স্মার্ট ফোনেই পড়ছে। কিন্তু বাস্তবতা সেটা নয়। আমাদের সময়ে ( মানে আমরা যখন কিশোর-তরুণ ছিলাম) আমরা প্রচুর বই পড়তাম। বলতে গেলে এই পড়াটা--- বিশেষ করে পাঠ্যবইয়ের বাইরের বইগুলো---গল্প, উপন্যাস, কবিতা, বাংলা-ইংরেজি গ্রামার---ইত্যাদি পড়া আমাদের অন্যতম প্রিয় বিনোদনের মাধ্যম ছিলো। যেকোন কিছু পড়ে ফেলার একটা নেশা ছিলো। লুকিয়ে লুকিয়ে গল্প- উপন্যাস পড়তে গিয়ে বড়দের অনেক বকাঝকা এমনকি মার পর্যন্ত খেয়েছিলাম। তখন বইয়ের পর্যাপ্ততা ছিলো না, আবার কিনে পড়ার সামর্থ্যও ছিলো না। কিন্তু ঐ নেশার কারণে কোনোভাবে কারো কাছ থেকে জোগাড় করে আমরা বই পড়তাম। নতুন বই পড়ার জন্য একটা অদম্য উৎসাহ ও উত্তেজনা আমাদের মধ্যে কাজ করতো। আজকালকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে তেমন উৎসাহ চোখে পড়ে না। আর একটি ব্যাপার হলো---টিচারের নোট কিংবা অন্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত নোট বা অন্যান্য লেখা ---সেটা যত পৃষ্ঠাই হোক না কেনো, পড়ার জন্য আমরা নিজ হাতে কপি করে নিতাম। আজকাল ছেলেমেয়েরা দুই লাইনের একটা লেখাও ফটোকপি করে অথবা মোবাইলে ছবি তুলে নেয়। সহজ প্রযুক্তি। কিন্তু পড়াশোনায় এতো সহজ প্রযুক্তির ব্যবহার সবসময় ভালো ফল বয়ে আনে না। বই না পড়ার কারণে এবং দেখে দেখে স্বহস্তে প্রচুর না লেখার কারণে ছেলেমেয়েরা লিখতে গেলে প্রচুর বানান ভুল করে। এরা নিজের থেকে গুছিয়ে দুকলম লিখতে পারে না। এদের শব্দচয়ন এবং বাক্যের গাঁথুনি বড় দুর্বল। কিছু লিখতে গেলে সেখানে ভাব বা ভাবনার গভীরতা বা বৈচিত্র্য চোখে পড়ে না। এদের চিন্তা-চেতনা, কল্পনাশক্তি তথা সৃজনশীলতার কোনো ছাপ তারা তাদের লেখায় বা বলায় প্রতিফলিত করতে পারে না। দেশ-বিদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিনাটি এরা জানে না। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি--- অনেক উঁচুশ্রেণির শিক্ষার্থীর কাছেও ‍‍`তিতাস একটি নদীর নাম‍‍` কার লেখা--- এ প্রশ্নের সদুত্তর আমি পাইনি। Francis Bacon এমনি এমনি বলেননি যে--- " Reading maketh a full man." আমাদের বর্তমান প্রজন্ম যতই smart man বা gentle man-ই হোক না কেন, কিছুতেই তারা ‍‍`full man‍‍` নয়, কারণ তারা ‍‍`অকারণে‍‍` পড়ে না!

Side banner