ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিকে হাজতখানায় নিতে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের স্বল্প দূরত্বের পথ এড়িয়ে নেয়া হয় কয়েক মিনিট ঘুরিয়ে। জঙ্গিদের নেয়ার পথটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, বলছেন খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রধান। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, কাশিমপুর কারাগারের গাফিলতির কারণেই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
ডানপাশে সিজিএম কোর্ট আর বাপাশে হাজতখানা। জঙ্গিদের সিজিএম কোর্টের ভেতর দিয়ে হাজতখানায় নিতে সময় লাগে ৩০ সেকেন্ডের কম। অথচ তাদের চার-থেকে পাঁচ মিনিটের পথ ঘুরিয়ে বাইরে দিয়ে হাজতখানায় আনা হচ্ছিল। এখন প্রশ্ন উঠেছে কেন এই পথ দিয়ে তাদের আনা হচ্ছিল।
সোমবার (২১ নভেম্বর) কয়েক দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে তদন্ত কমিটির সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে দ্বায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদেরও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, সিজিএম কোর্টের ভেতর দিয়ে দিয়ে জঙ্গিদের নিতে পারতো পুলিশ সদস্যরা।
(২০ নভেম্বর) রোববার জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর আদালতে এখন সতর্ক অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সব আসামিকে প্রিজন ভ্যান থেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। হাজতখানায় নিতেও ব্যবহার হচ্ছে প্রিজন ভ্যান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলছেন, এই ধরনের দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তায় আদালতে আনা হয়। কিন্তু কাশিমপুর কারাগার জঙ্গিদের আদালতে নেয়ার বিষয়ে কোন তথ্য দেয়নি।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় নিম্ন আদালতের নিরাপত্তায় ৩ প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে ডিএমপি।
সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং লেখক-ব্লগার ও রাজনীতিবিদ হত্যার মিশন বাস্তবায়নের জন্যই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা। যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক, ওরফে মেজর জিয়া। এমন তথ্য দিয়ে পুলিশ বলছে, ছিনতাইকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া ১৮ জনই আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা। এদের সবাইকে শনাক্তের পর গ্রেফতারে চলছে অভিযান।
ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে রোববার (২০ নভেম্বর) পুলিশের মুখে স্প্রে মেরে ছিনিয়ে নেয়া হয় দুই জঙ্গিকে। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে মোটরসাইকেলে পালানোর দৃশ্য। এ ঘটনায় দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট।
২০ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৪১ জনকে আসামি করে, রোববার রাতেই কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ। সোমবার মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে।
গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান জানিয়েছেন, শীর্ষ জঙ্গি নেতা মেজর জিয়ার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বেই করা হয় এই ছিনতাই। উদ্দেশ্য ছিল সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং লেখক, প্রকাশক ও ব্লগারদের হত্যার মিশন বাস্তবায়ন। তদন্তের অংশ হিসেবে কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শন করেছে সিটিটিসির তদন্তদল। সেখান থেকে ফিরে সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান জানালেন, আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মিশনে সরাসরি অংশ নেয় ৬ জঙ্গি। ১০ থেকে ১২ জন ছিল ঘটনাস্থলের নজরদারিতে। আর পরিকল্পনায় ছিলো আরও ৯ জন। এরা সবাই আনসার আল ইসলামের সদস্য।
জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে র্যাব। তাদের দাবি, সহযোগীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান।দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এরই মধ্যে এক পরিদর্শকসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ডিএমপি।
আপনার মতামত লিখুন :