কাগজশিল্পের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর জন্য ঢাকায় পঞ্চমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে পেপারটেক এক্সপো। রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়ে শেষ হবে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি)। এতে ১৬ দেশের দেড় শতাধিক কোম্পানি অংশ নিয়েছে।
পেপারটেক এক্সপোর প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের ভিড়। তবে অন্যবছরের তুলনায় এবার লোকজন অনেক কম আসতেছে বলে জানান বিভিন্ন স্টলের কর্তৃপক্ষ।
এক্সপো ঘুরে দেখা যায়, প্রোডাক্টের গুণগতমান এবং দামসহ বিভিন্ন দিক যাচাই করছেন এক্সপোতে আসা গ্রাহকরা। কেউ কেউ সংগ্রহ করছেন যোগাযোগের ফোন নাম্বার, যাতে পরবর্তী চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার করতে পারে। এছাড়াও পণ্য সরবরাহ সুযোগ সুবিধা এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছেন গ্রাহক ও ডিলাররা।
এক্সপোতে অংশগ্রহণ করা ইউনুছ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ সুমন তারেক বলেন, আমরা এই মেলায় সোনালী পেপারের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ধরণের প্রোডাক্ট গ্রাহকদের জন্য প্রদর্শন করছি।
প্রতিটি প্রোডাক্টের গুণগতমান আমরা গ্রাহকদের মাঝে তুলে ধরছি। এবারের মেলায় আমরা নতুন একটি প্রোডাক্ট যুক্ত করেছি। প্রোডাক্টটি হলো সোনালী ফয়েল। এই পণ্যটিও আমাদের অন্য পণ্যের মত ভালো কোয়ালিটির। আমাদের কোম্পানি সব সময় প্রোডাক্টের কোয়ালিটিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমাদের পণ্যের গুণগতমান ভালো হওয়ায় কম প্রচারণায়ও বাজারে ভালো চাহিদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এটা ধরে রাখতে চাই।
সোনালী পেপারের উপ-জেনারেল ম্যানেজার হাসানুজ্জামান বলেন, পেপারটেক এক্সপোতে আমাদের প্রোডাক্ট প্রদর্শনের মাধ্যমে গ্রাহককে এর গুণগতমান সম্পর্কে অবগত করে থাকি। এক্সপোতে আসা ক্রেতা ও ডিলারদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। বর্তমানে শত প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও আমরা প্রোডাক্টের মান ধরে রেখে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কারণে আমরা উৎপাদনমুখী কিছু সমস্যায় পড়েছি। এলসি সমস্যার কারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। এর ফলে ডিলারদের চাহিদার আলোকে ডেলিভারি দিতে হিমশিম খাচ্ছি। এতো সব সমস্যা থাকা সত্বেও আমরা কোম্পানির সুনাম ধরে রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।
ইউনুছ গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ব্যবসার সফলতা আসবে, যখন আমরা গ্রাহকদের কোয়ালিটি সম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করতে পারবো। এই জন্য আমরা পণ্যের গুণগত মানের দিকে জোর দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত ভালো সেবা বা ভালো পণ্য সরবরাহ করায় সোনালী পেপার দেশের অন্যতম কোম্পানির সুনাম অর্জন করেছে। সামনের দিনেও এই সুনাম ধরে রাখতে কাজ করে যাবো।
তিনি বলেন, পণ্যের গুণগতমান ভালো হলে গ্রাহক খুঁজে খুঁজে হলেও আপনার পণ্য গ্রহণ করবে। এদিক থেকে যথেষ্ট সফলতা আমরা পেয়েছি। কারণ আমাদের কোম্পানির প্রচারণা অন্যদের মতো না থাকা শর্তেও যে আস্থা অর্জন করেছে, সেটা অনেক বড় প্রাপ্তি। আমরা সামনের দিনেও এই সুনাম ধরে রাখবো। এছাড়াও নিজের দেশের পাশাপাশি বিদেশেও আমাদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
ইউনুছ গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাবেদ নোমান বলেন, আমাদের দেশে অনেক পেপার কোম্পানি আছে। এসব কোম্পানির মধ্যে বাজারে টিকে থাকতে আমরা প্রোডাক্টের গুণগতমানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বিগত দিনে যত জায়গায় আমাদের পণ্য পৌঁছেছে কাস্টমাররা তা সাদরে গ্রহণ করেছে। আমাদের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। প্রতিযোগিতার বাজারে আমরা গুণগতমানের দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করার প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানির প্রতিটি কর্মকর্তা কর্মচারি ফ্যামিলি মেম্বার হয়ে কাজ করছে। যার কারণে আমাদের কোম্পানির কাজের গতি বাড়ছে। শুধু তাই নয় আমাদের প্রতিটি ডিলারের সাথে সম্পর্ক ফ্যামিলির সদস্যের মত। এজন্য তাদের সাথে আমরা দীর্ঘদিন কাজ করতে পারছি। কিছু কিছু ডিলার প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে আমাদের কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মতে আমাদের পণ্যের গুণগতমান ভালো থাকায় মানুষ সহজে তা গ্রহণ করছে। আমরাও চাই এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে।
মোহাম্মদ জাবেদ নোমান আরো বলেন, আমাদের বিশেষ প্রচারণা না থাকলেও, সহকর্মীদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভালোবাসা এবং ডিলার ও সেলারদের আস্থার কারণে ব্যবসার পরিধি ও প্রসার বাড়ছে।
এদিকে সর্বশেষ গত তিন বছর আগে ৪র্থবারের মতো আয়োজন হয়েছিলো এই এক্সপো। করোনার কারণে তিন বছর বিরতির পর ৫মবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে এই মেলা।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এক্সিবিশনস প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘ঢাকাসহ বাংলাদেশের কাগজশিল্পের সব ধরনের শিল্প ইন্ডাস্ট্রির ওপর ভিত্তি করেই আমাদের এই প্রদর্শনীর আয়োজন।
এই প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের কাগজ ইন্ডাস্ট্রিকে আরও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বমানের কাগজ উৎপাদনে সক্ষম করা। বর্তমানে বাংলাদেশে পেপার মিলস্, টিস্যু মিলস্, প্যাকেজিং, কনভার্টিং, প্রিন্টিং, পেপার কেমিক্যালসসহ আরও বিভিন্ন মাঝারি ও ভারী শিল্প আছে। তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হচ্ছে কাগজশিল্পের সব ধরনের মেশিনারিজ, উপকরণ ও পণ্য।’
পেপারটেক এক্সপোতে ‘ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ওমান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, মিসর, জার্মানি, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফিনল্যান্ড ও তুরস্কসহ দেড় শতাধিক কোম্পানি অংশ নিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :