দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন কৃষক।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। কৃষিখাতে স্বল্প সুদ হারে ঋণ প্রবাহ বজায় রাখার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ নামে গঠিত তহবিলের আকার ৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত তহবিলের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রয়োজনে তহবিলের অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদ বাড়ানো হবে।
কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতাভুক্ত ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণ চুক্তির মাধ্যমে এই সুবিধা নিতে পারবেন। এসব ব্যাংকগুলোর চাহিদা, কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা, ঋণ বিতরণের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে কৃষি ঋণ বিভাগ তহবিল বরাদ্দ করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করবে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনবোধে বরাদ্দকৃত তহবিলের পরিমাণ পুননির্ধারণ করতে পারবে।
সার্কুলারে আরো বলা হয়, এই তহবিলের অধীনে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করবে। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, বর্গা চাষি ও ফসল (ধান, শাক-সবজি, ফুল ও ফল) চাষের জন্য শুধু ফসল দায়বন্ধনের বিপরীতে এককভাবে জামানতবিহীন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
শস্য ও ফসলখাতে সর্বোচ্চ ৫ একর জমিতে ফসল চাষের জন্য ঋণ পাবেন কৃষক। এসব ছাড়া অন্য খাতে ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম জামানত গ্রহণের বিষয়ে ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে।
ঋণ পরিশোধে কৃষক বা গ্রাহক তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস সময় পাবেন। এই তহবিলের ঋণ কোনোভাবেই গ্রাহকের পুরনো ঋণের সমন্বয় করতে পারবে না। কোনো ঋণ খেলাপি গ্রাহক এ ঋণ পাবেন না।
কৃষক পর্যায়ে ঋণ আদায়ের দায়িত্ব ব্যাংকের ওপরেই থাকবে। ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওনাকে সম্পর্কিত করা যাবে না। ঋণের বকেয়া নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে শোধ না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব সমন্বয় করে আদায় করা হবে।
ঋণের কোনো অংশ সদ্ব্যবহার না হলে এবং ৪ শতাংশ বেশি সুদ আদায় করলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সে পরিমাণ অর্থের ওপর নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ এককালীন আদায় করা হবে।
তহবিলের আওতায় বিতরণ করা প্রতিটি ঋণ আলাদা ফাইলে সংরক্ষণ করতে হবে। ঋণের বিবরণী বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগে প্রতি মাসের শেষে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :