সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছোট চমৎকার একটি গ্রাম ভোলাগঞ্জ । বাংলাদেশের পর্যটন খাতে অন্তর্ভূক্ত বাংলার কাশ্মীর খ্যাত এই গ্রামটি ভ্রমণের ইচ্ছা বহুদিন থেকেই ছিল। অবশেষে গত ৩০ মার্চ সেই কাঙ্খিত সুযোগটি পেয়ে যাই। প্রথমেই ভোলাগঞ্জ সম্পর্কে পাঠকদের একটু ধারণা দেয়া যাক। সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলোমিটার। ভোলাগঞ্জে ধলাই নদী পিয়াইন নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। রোপওয়ে, পাথর কেয়ারী, নদী এবং পাহাড় মিলে এক অপরূপ সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই ভোলাগঞ্জ। ভারতের তৎকালীন আসাম প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে লোকজন একসময় এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতেন। কালের বিবর্তনে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রজ্জুপথ বা ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে, যেটি প্রায় ১১ মাইল।
দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি এই ভোলাগঞ্জ যেখানে মজুদ রয়েছে বিপুল পরিমাণ পাথর। এছাড়া ভোলাগঞ্জে রয়েছে একটি ল্যান্ড কাস্টমস পোর্ট। এই ল্যান্ড পোর্ট দিয়ে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম চলে। পোর্ট দিয়ে সাধারণত ভারত থেকে প্রচুর চুনাপাথর আমদানি করা হয়। প্রতিদিন শত শত ট্রাক এসব চুনা পাথর নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
কোথাও বেড়াতে গেলে সাধারণত দল বেঁধে যেতে পারলে খুবই আনন্দের হয়। পাশাপাশি খরচও অনেকাংশে কম হয়। দল বেঁধে যেতে না পারার কারণে দুইজন রওনা দিলাম ভোলাগঞ্জ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। মার্চের ২৯ তারিখ দুপুর ৩টার ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। নির্ধারিত সময়েই কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিমানবন্দর রেলস্টেশনে আসে। ট্রেনটিতে তেমন যাত্রীর ভিড় চোখে পড়েনি। আমরা দুইজন যথারীতি আসন খুঁজে ট্রেনের সিটে বসলাম। ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । রাত সাড়ে ৯টায় আমরা সিলেটে রেলওয়ে স্টেশন গিয়ে পৌঁছে হোটেল সুপ্রিম ইন্টারন্যাশনাল এ রাত্রিযাপন করি।
পরদিন সকালে আমরা সিলেট শহরের আম্বরখানা পয়েন্টে চলে যাই। সেখান থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে আমরা ভোলাগঞ্জে যখন পৌছালাম তখন সকাল সাড়ে ৯টা। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়ে গেলাম। ওপারের মেঘালয় রাজ্যের বিশাল পাহাড়গুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কখন এই প্রকৃতির স্বাদ নেবো, সেই আকাঙ্খায় যেন আর তর সইছিল না। আমরা ভোলাগঞ্জ নৌঘাট থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে একটি নৌকা ভাড়া করে সাদাপাথরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। গন্তব্য সাদা পাথর। ইঞ্জিনের নৌকাটি আস্তে আস্তে চলছিল। এখন শুকনো মৌসুমে পাহাড় থেকে বেয়ে আসা নদীতে পানি খুবই কম। পানির উপর থেকে স্বচ্ছ পাথরগুলো দেখা যায়। নদীর দুইপাশে শত শত মানুষ জীবিকা আহরণের জন্য ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা পাথর সংগ্রহ করছে। অসংখ্য মহিলাদেরকেও পাথর সংগ্রহ করতে দেখা যায়। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌছে যাই।
সাদা পাথর এলাকাতে গিয়ে আমরা রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে যাই পাথর দেখে । ক্ষণে ক্ষণে মেঘালয়ের ঠাণ্ডা বাতাস যখন গায়ে লাগে তখন ঠাণ্ডা প্রশান্তি অনুভূত হয়। এছাড়াও পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানির কলকল শব্দ মনকে শিহরিত করে তোলে। পাথরের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পোর্টে অপেক্ষমান শত শট ট্রাকের সারি চোখে পড়ল। প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কখন যে ৩ ঘণ্টা পার হয়ে গেল টেরই পাইনি। পরিশেষে ভোলাগঞ্জ বাজারে হোটেলে দুপুরের খাবার শেষ করে সিএনজি রিজার্ভ করে আমরা সিলেট শহর এসে রাত্রি যাপন করি । পরদিন সকাল সোয়া ৬টায় কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সিলেট হতে রওনা দিয়ে দুপুর ১টায় ঢাকায় এসে পৌঁছাই।
কখন যাবেন : মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় যাওয়ার উপযুক্ত সময়।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে বাসে করে সিলেট কদমতলী অথবা ট্রেনে করে ঢাকা বিমানবন্দর বা কমলাপুর স্টেশন থেকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন। সিলেট শহর থেকে আম্বরখানা পয়েন্ট। ওখান থেকে সিএনজি, বিআরটিসি বাস, সাদাপাথর বাস সার্ভিসের মাধ্যমে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর নৌকাঘাট, নৌকাঘাট থেকে নৌকাভাড়া করে সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র।
খরচ : ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট এসি চেয়ার জনপ্রতি ৬১০ টাকা, বাসে ৪৭০ টাকা। সিলেট বাস স্টেশন বা ট্রেন স্টেশন থেকে আম্বরখানা পয়েন্ট জনপ্রতি ৩০ টাকা। আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ভোলাগঞ্জ নৌকা ঘাট সিএনজি জনপ্রতি ১০০ টাকা, বিআরটিসি জনপ্রতি ৬০ টাকা অথবা সাদাপাথর বাস সার্ভিস জনপ্রতি ৭০ টাকা। ভোলাগঞ্জ নৌকাঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ (১-৮) জন। প্রতি নৌকা ৮০০ টাকা (যাওয়া-আসা)।
আপনার মতামত লিখুন :