ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার মাধ্যমেই আলোচনায় উঠে আসা ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনির আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ভাইরালের পর তা পর্যালোচনা করে দেখছে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পরীমণি ক্লাবে ঢুকেই বারের সামনে চেয়ারে বসে তার সঙ্গীদের নিয়ে মদ পান করছেন। এই সময় দূর থেকে বোট ক্লাবের পরিচালনা পরিষদের সদস্য নাসির ইউ মাহমুদ তাকে মদ পান করতে বারণ করেন। তখন পরীমণি একটি বোতল নিতে চাইলে নাসির ইউ মাহমুদ বলেন, আপনি কোনো বিদেশি মদ নিতে পারবেন না। এখানেও তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন পরিচালনা পরিষদের সদস্য।
জানা গেছে, পরীমনি মদপানে বাধা পেয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এরপর ক্ষুব্ধ পরীমনি ক্লাবে ভাঙচুর চালান। গ্লাস, প্লেট ভাঙেন এবং নাসির ইউ মাহমুদের দিকে বোতল ছুড়ে মারেন। এক পর্যায়ে নাসির মাহমুদ ক্ষুব্ধ হয়ে পরীমণিকে চড় মেরে বসেন। পরবর্তীতে পরীমণিও সংবাদ সম্মেলনে চড় মারার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। অনেকেই বলছেন, চড় মারার ক্ষোভ থেকেই বাকি সব কিছু করেছেন পরীমনি।
এর আগে গণমাধ্যমে বোট ক্লাবের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ পায়। ফুটেজে দেখা যায়, ৯ জুন রাত ১২ টা ২২ মিনিটে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে একটি কালো গাড়ি দাঁড়ায়। নামতে দেখা যায় পরীমণি, জিমি ও অমিকে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি থেকে বের হন বনিও। ক্লাবের রিসিপশনেও অমির সঙ্গে পরীমনিসহ অন্যদের ঢুকেতে দেখা যায়। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন নাসির ইউ আহমেদ।
এর আগে গুলশান-১ এলাকায় অবস্থিত অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাদের অভিযোগে জানিয়েছিল, পরীমনি মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় অসদাচরণ ও ভাঙচুর করেছেন তাদের ক্লাবে। গত ১৬ জুন গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৮ জুন রাতে ক্লাব বন্ধ হওয়ার পরও পরীমনি একজন সঙ্গীসহ জোর করে ক্লাবে ঢুকে বারে চলে যান। সেখানে মদ চেয়ে না পেলে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। ১৫ টি গ্লাস, ৯টি অ্যাশ ট্রে ও বেশ কয়েকটি প্লেট ভাঙেন তিনি। এক পর্যায়ে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশ ডেকে মিথ্যা নালিশ করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি বুঝে পরীমনিকেই বকাঝকা করেছে। তবে পুলিশ আমাদের অভিযোগ করতে বললেও আমরা করিনি। আমরা মনে করি, পরীমনি একজন নায়িকা ও সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি নিজের ওজন নিজে রক্ষা করতে না পারলে আমাদের কিছু করার নেই।
কে এম আলমগীর বলেন, এক পর্যায়ে পুলিশ নিজেই সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা দাবি জানিয়েছেন যে, পরীমনিকে বার ও ক্লাবগুলোতে নিষিদ্ধ করা হোক। শুধু ক্লাব সদস্যই নয়, ক্লাবগুলোর নিয়মিত অতিথিদের মধ্যে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নায়ক, প্রযোজক, পরিচালক, কলাকুশলীরাও এমন দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। বার ও ক্লাবের সদস্যরা পরীমনির বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিতে রীতিমতো চাপও প্রয়োগ করছেন। এ অবস্থায় রাজধানীর সব ক্লাব ও বারে পরীমনিকে নিষিদ্ধের ঘোষণা আসতেও পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই পরীমনিকে ঢাকার ক্লাব ও বারগুলোতে ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত আলোচনায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৌশলগত কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না এলেও মৌখিকভাবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে জানিয়ে দেয়া হবে।
ঢাকার একটি নামকরা ক্লাবের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরীমনিকে ক্লাবের কোনো ফাংশনে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। ক্লাবের কোনো সদস্য পরীমনিকে অতিথি হিসেবেও নিয়ে আসতে পারবেন না। সব সদস্যদের এ বিষয়ে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।
চলচ্চিত্রাঙ্গনের অন্য কারও জন্য এই নিষেধাজ্ঞা নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু পরীমনির জন্য। শুধু আমাদের ক্লাব নয়, ঢাকার সব ক্লাবই এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবে।
এ বিষয়ে গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর বলেন, পরীমনি এই ক্লাবের সদস্য না হওয়ায় এমনিতেই ক্লাবে আসতে পারবেন না। সেদিন একজন সদস্যের অতিথি হিসেবে আসতে চেয়েছিলেন। ওই সময় কাউকে ঢুকতে না দেয়া হলেও তার পরিচয় ভেবেই ঢুকতে দেয়া হয়েছে। তবু তিনি যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাতে আর তিনি এই ক্লাবে প্রবেশ করতে পারবেন না। আমাদের সব সদস্যদেরও বলা হয়েছে, তাকে যেন কেউ অতিথি হিসেবে ক্লাবে না আনেন।
যে ঢাকা বোট ক্লাবকে নিয়ে পরীমনির অভিযোগ, সেখানকার কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে ক্লাবের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আপাতত ওই ঘটনার পর ক্লাবে বহিরাগত কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আর পরীমনির জন্যও ওই ক্লাবের দরজা বন্ধ।
বোট ক্লাবের ওই সদস্য বলেন, পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবে আর কোনোদিন প্রবেশ করতে পারবেন না। কোটি টাকা দিলেও এই ক্লাবের সদস্য হতে পারবেন না। শুধু এই ক্লাব নয়, কয়েকদিনের মধ্যে উত্তরা ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, অল কমিউনিটি ক্লাব, র্যাডিসন বার, রিজেন্সি বার, ফুয়াং বার, পিকক, ড্রাগন, রুচিতা, ডিপিএল, ডিম্পল, সালামার, রেড বাটন, সিউল, এরাম, ওয়েস্টিন, গুলশান ক্লাব, শাহীন ক্লাবসহ ঢাকার সব ধরনের বার ও ক্লাবে পরীমনিকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :