ইংরেজি চর্চা ও সংস্কৃতি চর্চা
মানিক দে শ্রাবণ
১৯৯৪/৯৫ খ্রিস্টাব্দের কথা। আমার খুব পরিচিত আমেরিকান এক দম্পতি বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে তাঁদের সাথে আমার পরিচয়। চট্টগ্রাম শহর ঘুরে দেখবেন। তাঁদের সময় দিতে পারা মানে আমার ইংরেজি চর্চাও হবে আর নতুন কিছু শেখাও হবে । না, টুরিস্ট গাইড হিসেবে নয়- পয়সা পাওয়া যাবে না।জানি যা পাবো, তা আবার পয়সা দিয়ে কেনাও যাবে না।
এবার মূলকথা বলি- তাঁরা বেড়াতে যাবেন, সবকিছু ঠিকঠাক। আমিও রুবেল প্রস্তুত। গেলাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। ঘুরাঘুরি করলাম, কর্ণফুলির বুকে নৌকায় চড়লাম, আর আমি সর্ব জ্ঞানীর মতো সব জায়গার বর্ণনা দিচ্ছিলাম। রুবেল বিভিন্ন কোণ থেকে ছবি তুলছিলো। নিজকে একটু একটু হিরো লাগছিল। আমার মুখ হতে মোটামুটি সুন্দর সুন্দর ইংরেজি বের হচ্ছিল। বুঝেন তো ইংরেজি বিভাগে পড়ি--- তাঁদের বোঝাতে হবে- আমরাও সাবলীল ও শুদ্ধভাবে ইংরেজি বলতে পারি। তাঁরা বেশ মুগ্ধ চিত্তে আমার কথা শোনছিলেন- মাঝে মাঝে আমার উচ্চারণ, শব্দ চয়ন ও বাক্য গঠনের প্রশংসাও করছিলেন। (আমেরিকানরা কিন্তু সহজেই নিজের আবেগ প্রকাশ করেন না; অন্যকে উৎসাহিত করতে জানে আর প্রশংসা করার কৌশলও জানে।)
যে কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বললাম--- নাস্তা করার সময় আমি ও রুবেল খাচ্ছি আর খাবারের অবশিষ্ট অংশ, টিস্যু, প্যাকেট, কলা ও কমলার চামড়া, পানির খালি বোতল পরমানন্দে (!) এদিক-ওদিক ফেলে দিচ্ছি। দেখলাম, তাঁরা খাওয়ার পর অবশিষ্ট সবকিছু প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে দিচ্ছিলেন। আমি থাকতে অতিথিদের এতো কষ্ট করতে দেখে বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ জনের মতো বললাম, "আপনারা অতো কষ্ট করেছেন কেন? আপনারা ওসব যেখানে খুশি ফেলতে পারেন--- কোনো সমস্যা নেই, অসুবিধা হবে না, জরিমানা দিতে হবে না।" ভদ্র মহিলা কমলার খোসা ছাড়িয়ে নিজের ব্যাগে রাখতে রাখতে বললেন, "আমি বাংলাদেশকে আর নোংরা করতে চাই না। তোমাকে সবসময়ই ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। অন্যেরা ফেলে বলে আমিও ফেলব নাকি? আমি কেন যেখানে সেখানে এইসব ফেলে এ জায়গাটি আরো অপরিষ্কার করব, নোংরা করব?"
সেদিন আমার সব সমস্ত স্মার্টনেস মাটিতে মিশে গিয়েছিল।
ছবি : কামাল হোসেন (২৯ চবি) এর এই ছবির ক্যাপশন দেখে ঘটনাটি মনে পড়ল। আমরা আমাদের আর কত নোংরা করবো!
আপনার মতামত লিখুন :